প্রপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো একটি নির্বাচন পদ্ধতি। সহজ করে বললে, এটি হলো ভোট ভাগ করে নেওয়ার একটি ন্যায্য পদ্ধতি।
মূল ধারণাটি সহজ: একটি রাজনৈতিক দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদ বা সরকারে তাদের প্রায় তত শতাংশই আসন পাওয়া উচিত।
যেমন, যদি একটি দল মোট ভোটের ৩০% পায়, তাহলে তাদের প্রায় ৩০% আসনই পাওয়া উচিত। এটি অন্য নির্বাচন পদ্ধতির চেয়ে আলাদা, যেখানে একটি দল সব মানুষের বেশি ভোট না পেয়েও অনেক আসন জিতে নিতে পারে।
পিআর সাধারণত কিভাবে কাজ করে?
১. একাধিক বিজয়ী: পিআর পদ্ধতিতে, নির্বাচনী এলাকাগুলো (যাকে আমরা "ডিস্ট্রিক্ট" বলি) সাধারণত একজন নয়, বরং একাধিক ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে। এর ফলে বিভিন্ন দল সেই এলাকা থেকে কিছু আসন পেতে পারে।
২. আপনার ভোটের গুরুত্ব বেশি: মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি ভোট যেন গুরুত্বপূর্ণ হয়। আপনি যদি একটি ছোট দলকে ভোট দেন, আপনার ভোট তাদের একটি আসন পেতে সাহায্য করবে। অন্য ব্যবস্থায় আপনার ভোট "নষ্ট" হয়ে যেতে পারে যদি আপনার দল আপনার এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোট না পায়।
৩. ছোট দলের জন্য ভালো: পিআর ব্যবস্থা ছোট রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীগুলোর জন্য সরকারে আসার সুযোগ তৈরি করে। এর মানে হলো, আরও ভিন্ন ভিন্ন ধারণা এবং কণ্ঠস্বর শোনা যেতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের পিআর পদ্ধতি:
পিআর সেটআপের কয়েকটি উপায় আছে:
* পার্টি-লিস্ট পিআর (Party-List PR):
এটি খুবই সাধারণ। আপনি সাধারণত একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ভোট দেন। প্রতিটি দলের একটি তালিকা থাকে যেখানে তারা সরকারে পাঠাতে চায় এমন ব্যক্তিদের নাম থাকে। যদি দলটি যথেষ্ট ভোট পায়, তাহলে তাদের তালিকা থেকে সেই ব্যক্তিরা আসন পায়।
* সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল ভোট (STV):
এটি একটু জটিল। আপনি আপনার পছন্দের প্রার্থীদের ক্রম অনুসারে ভোট দেন (প্রথম পছন্দ হিসেবে ১ নম্বর, তারপর ২ নম্বর, ইত্যাদি)। যদি আপনার পছন্দের ব্যক্তি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ভোট পেয়ে যান, অথবা তিনি যথেষ্ট ভোট না পেয়ে বাদ পড়েন, তাহলে আপনার ভোট আপনার দ্বিতীয় পছন্দের কাছে চলে যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করে যে আপনার ভোট সবসময় আপনার পছন্দের কাউকে সাহায্য করছে।
* মিক্সড-মেম্বার প্রপোর্শনাল (MMP):
এই পদ্ধতি উভয় পদ্ধতির সেরাটা নিতে চেষ্টা করে। আপনি সাধারণত দুটি ভোট দেন: একটি আপনার স্থানীয় এলাকার একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য এবং অন্যটি একটি রাজনৈতিক দলের জন্য। দলের ভোটটি তখন ব্যবহার করা হয় যেন সরকারের মোট আসনগুলো ন্যায্য হয় এবং পুরো দেশের মানুষের দলগত ভোট প্রতিফলিত করে।
পিআর কেন ভালো?
* ন্যায্য ফলাফল:
সরকার ভোটারদের ইচ্ছাকে আরও ভালোভাবে প্রতিফলিত করে।
* বেশি মানুষ ভোট দেয়:
যখন আপনার ভোট সবসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন আপনার ভোট দেওয়ার আগ্রহ বাড়তে পারে।
* ভিন্ন কণ্ঠস্বর শোনা যায়:
ছোট দল এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার ভালো সুযোগ থাকে।
* একসাথে কাজ করা:
প্রায়শই দলগুলোকে একসাথে কাজ করতে হয় এবং দেশ চালানোর জন্য "জোট" গঠন করতে হয়, যা আপস করার সুযোগ তৈরি করে।
পিআর-এর অসুবিধা আছে কি?
* জোট সরকার জটিল হতে পারে:
কখনও কখনও বিভিন্ন দলের পক্ষে একমত হওয়া কঠিন হতে পারে এবং সরকার দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
* বেশি দল:
খুব ছোট বা এমনকি চরমপন্থী দলগুলোও কিছু আসন পেতে পারে।
* সরাসরি সংযোগ কম:
কিছু পদ্ধতিতে, আপনি আপনার স্থানীয় এলাকার একজন নির্দিষ্ট প্রতিনিধির সাথে কম সংযুক্ত অনুভব করতে পারেন।
সব মিলিয়ে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে ইউরোপে, নির্বাচন পরিচালনার একটি জনপ্রিয় উপায়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, সরকার যেন সত্যিকারের অর্থে ভোটারদের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।